হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত। এগুলো হলো- শিঙা লাগানো, মধু পান করা এবং আগুন দিয়ে গরম দাগ দেওয়া। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে গরম দাগ দিতে নিষেধ করি।’ –সহিহ বোখারি: ৫৬৮১

হিজামা এবং রুকিয়াহ সম্পর্কিত সার্ভিস প্রদান করা হয়।

হিজামা (Cupping) কি ?



হিজামা হল এমন একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতা বিদ্যামান রয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” [আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৭০]

হিজামার পদ্ধতিঃ

শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে মেশিনের সাহায্যে রক্ত চুষে নেওয়া। উল্লেখ্য, হিজামায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা উত্তম এবং প্রত্যেকের চিকিৎসায় ভিন্ন ভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত যাতে, রক্তজীবাণুর মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হতে না পারে।

হিজামার ব্যাপারে বর্ণিত কতিপয় হাদীছঃ

১। হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেউ হিজামা করতে চাইলে সে যেন আরবী মাসের ১৭, ১৯ কিংবা ২১ তম দিনকে নির্বাচিত করে। রক্তচাপের কারণে যেন তোমাদের কারো মৃত্যু না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে (হিজামা)।” [সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর : ৩৪৮৬]

২। হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” [সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর : ২০৫৩]

৩। হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে।” [আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৮২]

৪। হযরত জাবির রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় হিজামায় শেফা রয়েছে।” [ছহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর : ২২০৫]

৫। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খালি পেটে হিজামাই সর্বোত্তম। এতে শেফা ও বরকত রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বোধ ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।” [সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর : ৩৪৮৭]

৬। হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হিজামাকারী কতই উত্তম লোক। সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদন্ড শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।” [সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নম্বর : ২০৫৩]

রুকিয়াহ এর ব্যপারে হাদীসের অনেক দলীল-প্রমাণ আছে। যথা: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশ, আমল ও স্বীকৃতি।

১. আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “উত্তম চিকিৎসা হলো ‘কুরআন’। { সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৩৩, (তাপা); হাদীসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহীহ}

২. আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখনই অসুস্থ হয়ে যেতেন তখনই কিছু পাঠ করে নিজ শরীরে রুকিয়াহ করতেন। আর যখন তিনি কঠিন পিড়ায় আক্রান্ত হতেন তখন আমি পাঠ করে বরকত লাভের আশায় তাঁর ডান হাত দ্বারা তাঁর শরীরে বুলিয়ে দিতাম। {সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০০}

৩. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শিরক মুক্ত রুকিয়াহ করাতে কোন আপত্তি নেই”। {সহীহ মুসলিম, হা/৫৬২৫}

৪. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্য হতে কেউ যদি কারো উপকার করতে পারে তাহলে সে যেন তা করে”। {সহীহ মুসলিম, হা/৫৬২০, ৫৬২২-২৪}

৫. রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মে সালমা (রা.)-এর ঘরে একটি মেয়েকে দেখতে পেলেন। তার চেহারায় (বদ নজর লাগার) চিহ্ন (চেহারা কৃষ্ণকার হওয়া কিংবা স্বাভাবিক বর্ণ পরিবর্তন হয়ে অন্য বর্ণ ধারণ করা) ছিল, তখন রাসূল (সা.) বললেন “এর জন্য তোমরা রুকিয়াহ করো। কেননা সে বদ-নজরে আক্রান্ত হয়েছে”। { সহীহুল বুখারী, হা/৫৭৩৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬১৮}

৬. সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, আয়শা (রা.) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বদ-নজরে আক্রান্তকে রুকিয়াহ করার আদেশ দিয়েছেন”। {সহীহুল বুখারী, হা/৫৭৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬১৩}

৭. জিব্রাঈল (আ.) কর্তৃক নবী (সা.)-কে রুকিয়াহ করার বর্ণনাও পাওয়া যায়। {সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৯২, ৫৫৯৩}

৮. আয়িশাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু‘আববিযাতাইন’ (সূরা ফালাক এবং সূরা নাস) সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন”। {সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০৭-৯}

৯. আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) চোখ লাগা, বিষাক্ত জন্তুর বিষক্রিয়া ও বিষাক্ত পার্শ্বঘা থেকে বেঁচে থাকতে রুকিয়ার অনুমতি দিয়েছেন”। {সহীহ মুসলিম, হা/৫৬১৭}

রুকিয়াহ শিরকমুক্ত হতে হবে:

‘আওফ বিন মালিক আল্ আশ্জা‘ঈ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহিলী (অন্ধকার) যুগে (বিভিন্ন) মন্ত্র দিয়ে রুকিয়াহ করতাম। এজন্যে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আবেদন করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার নিকট উপস্থাপন করো, রুকিয়াতে কোন দোষ নেই- যদি তাতে কোন শিরক (জাতিয় কথা) না থাকে। {সহীহ মুসলিম, হা/৫৬২৫}

ঔষধের (আধুনিক চিকিৎসার) সাথে রুকিয়াহ:

আলী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কোন এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত আদায় রত ছিলেন। তদবস্থায় তিনি যমীনে হাত রাখতেই একটি বিচ্ছু তাঁকে দংশন করল। সাথে সাথে তিনি জুতা দ্বারা আঘাত করে বিচ্ছুটিকে মেরে ফেললেন। তারপর সালাত শেষ করে বললেন, বিচ্ছুটির উপর আল্লাহর অভিসম্পাত হোক। সে নামাযী, বেনামাযী অথবা বলেছেন, নবী বা অন্যলোক কাউকেও রেহাই দেয় না। এরপর তিনি কিছু লবণ এবং পানি নিয়ে তা একটি পাত্রে মিশ্রিত করলেন। তারপর আঙ্গুলের দৃষ্টস্থানে পানি ঢালতে এবং দৃষ্ট স্থানটি মুছতে লাগলেন। আর সূরা ফালাক এবং সূরা নাস দ্বারা স্থানটিকে রুকিয়াহ করলেন। {বায়হাকী হাদীসটি শোয়াবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন; মিশকাত (আরবী) হা/৪৫৬৭; মিশকাত (বাংলা, মিনা বুক হাউস) হা/৪৩৬৬; তাহক্বীক আলবানী সানাদ সহীহ}

লিখেছেন: আব্দুছ ছবুর চৌধুরী,ফাউন্ডার ও সি.ই.ও হিজামা এন্ড রুকিয়াহ ফাউন্ডেশন,ঢাকা-সিলেট।


রাজশাহী শহরের ভিতরে হিজামা এবং রুকিয়াহ সার্ভিস পেতে যোগাযোগ করুনঃ- 

রাজশাহী হিজামা এবং রুকাইয়া সেন্টার 

লোকেশনঃ নতুন বুধপাড়া, মতিহার, রাজশাহী(রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের উত্তর পাশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইস্টিশন থেকে পূর্ব সাইডে) 

মোবাইলঃ- 01926994188

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.