Hijama benefits - সুন্নাহর আলোকে হিজামার উপকারিতা ।
হিজামার উপকারিতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেলে যেকেউ এই চিকিৎসা নিতে চাইবে। হিজামাতে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক থিওরি, ফিজিওলজি, এনাটমি রয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ১৪০০ বছর আগেই বলে গিয়েছিলেন-
সেই সাথে মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপশম রয়েছে। হিজামাকে অনেকে শিঙ্গা বলে থাকেন। কিন্তু আধুনিক মেশিনের সাহায্যে শরীরের সামগ্রিক জ্ঞান লাভের পর যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা আরো বেশি ফলপ্রসূ।
হিজামা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এটি কি আসলে উপকারী কোন চিকিৎসা? এতে কি মানুষের ক্ষতি হতে পারে কিনা? যথেষ্ট তত্ত্ব ও উপাত্ত্ব অনুসারে আমরা আজ এটি বলতে পারি দক্ষ হিজামা থেরাপিস্ট সহকারে কারো হিজামা করা হলে তার কোন ক্ষতি হবার আশংকা নেই।
অনেক ধরনের কাপিং আছে। ড্রাই কাপিং, আকুপাংচার ইত্যাদি। কিন্তু উপকারিতার দিক থেকে হিজামা সর্বোত্তম। এটি শুধু ইসলামিক চিকিৎসা বলে উত্তম তা নয়। গবেষণা দ্বারা এটাই প্রমাণিত। আমাদের শরীরের প্রথম বৃহত্তম অঙ্গ ত্বক। দ্বিতীয় লিভার। শরীরের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি।
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার পিছনে এই লিভার ও কিডনি প্রধান ভূমিকা পালন করে। গবেষণা থেকে জানা গেছে হিজামাতে ত্বককে যে নেগেটিভ প্রেশার দেয়া হয় তা ৩৫ গুণ বেশি এই একই কাজ করে। অর্থাৎ ত্বকে নেগেটিভ প্রেশার দেয়া হলে যে পদার্থ টেনে নিয়ে আসে তাতেই থাকে সেসব বর্জ্য যা লিভার ও কিডনি ডায়ালাইসিস করে। আর এটিই হিজামা। আরেক ধরনের কাপিং আছে যাতে কাটা হয় না এটিও ব্যথার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
বিশেষ করে যারা খেলাধুলা করেন তাদের মাংসপেশির স্টিফনেস দূর করতে এটি বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও মুখের ত্বক, সেলুলিয়েটের (ত্বকে ভাঁজ পড়া) সমস্যা, মুখের লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া যাকে পোরস বলে, পেটের দাগ ইত্যাদির জন্য কাপিং ম্যাসাজ (ড্রাই কাপিং) কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
হিজামা চিকিৎসাতে ত্বকে খুব ই সামান্য কাটতে হয় এবং নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে বদ-রক্ত বের করা হয়। আমাদের ত্বক একটা রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। হিজামাতে ত্বকের তিনটি স্তরের কেবল উপরের স্তরটি কাটা হয় যার ফলে নিচের ত্বক ছাকনী হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু কেউ যদি এর নিচের ত্বক কেটে দেয় তবে ভাল রক্ত বের হয়ে যাবে। এতে যথেষ্ট ক্ষতি ও ইনফেকশনের আশংকা থাকে।
ইন্টারন্যাশনাল কাপিং থেরাপি এসোসিয়েশন বলেছে কাপিং একই সাথে একজন মানুষের একাধিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার উপশম করতে পারে।
আমরা একটা ওষুধ একটা মাত্র সমস্যার জন্য খেয়ে থাকি।কিন্তু হিজামাতে যে দূষিত প্লাজমা বেরিয়ে আসে তাতে থাকে একাধিক রোগের জীবাণু যেমন ঠাণ্ডা, কাশি, বিষন্নতা, আরথ্রাইটিস, কোমরের সায়াটিকার ব্যথা,চিন্তা, ঘুমের সমস্যা, মাংসপেশির ব্যথা এবং অন্যান্য সকল রোগের তীব্রতাও কমে আসে।
কাপিং থেরাপীর আন্তর্জাতিক সংস্থা ICTA থেকে হিজামার কিছু উপকারিতাছিঃ
১. হিজামা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
হিজামা কাপিং থেরাপী একটি অতি প্রাচীন চিকিৎসা। মিশরীয় এবং সৌদি আরব গবেষকরা বলেছেন এই থেরাপি
১। মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
২। আমরা যে ওষুধ খাই তার প্রভাবকে আরো কার্যকরী করে
৩। অনেক রোগ সৃষ্টিকারী এবং শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ রক্ত থেকে নিঃসৃত করে।
তারা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন প্রচলিত ওষুধ এর ১৫শতাংশ কম সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হিজামা যখন ওষুধের সাথে নেয়া হয় তখন তা ১৫৬ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর ওষুধ ছাড়া একক ভাবে হিজামা কাজ কড়ে ১৩৩ শতাংশ হারে।
২. দীর্ঘকালীন রোগ কমায়
গবেষণায় আরো পাওয়া গেছে যে, হিজামা থেরাপি ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার তীব্রতা হ্রাস পায়।
টেস্টের রিপোর্ট থেকে পাওয়া গেছে এক মাস পর ৩৪%, দুই মাস পর ৪০% এবং তিন মাস পর প্রায় ৬০% শতাংশ ব্যথা কমেছে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে ব্যথা, বাতের ব্যথা,পিঠের ব্যথা ও মেরুদন্ডের ব্যথা, ফিব্রোমায়ালজিয়া, হাটুর অস্ট্রিওআর্থারাইটিস অর্থাৎ হাটু ক্ষয়, হার্ণিয়ার সমস্যা, ঘাড় ও কাঁধের ব্যথা, দীর্ঘকালীন পিঠের ব্যথা, মাংশপেশীর ব্যথা, মচকে যাওয়া , পায়ে পানি আসা, ফুলে যাওয়া কিংবা আঘাতের কারণে ফেটে যাওয়ার ব্যথায় হিজামা খুব ভালো কাজ করে।
৩. ভাইরাল এবং ইনফেকশাস রোগ কমায় ও প্রতিরোধ বাড়ায়
হারপিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ভাইরাল হেপাটাইটিস, ব্রণ, ডার্মাটাইটিস, এবং সেলুলাইটিস এসব স্বাস্থ্য সমস্যা যা হিজামা কাপিং থেরাপি দ্বারা চিকিৎসা করা যায়।
একযোগে একাধিক শারীরিক উপশমে ভূমিকা রাখে স্নায়ুতন্ত্রের সিস্টেমে সেরোটোনিন, ডোপামাইন, এন্ডোরিফিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার এর মাধ্যমে।
এছাড়াও হিজামাতে তে যে সাময়িক সংকুচন-প্রসারণ ও কাটা হয় তা প্রতিরোধ সিস্টেমকে সক্রিয় করে রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
৪. কার্ডিওভাস্কুলার রোগের জন্য
স্টাডির রিপোর্ট অনুযায়ী উচ্চরক্তচাপ, হার্ট এটাক, হাত-পায়ের খিচুনী, DVT (Deeop vein Thrombosis for blood clot in deep vein), মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন যার কারণে ঘাড় ও গলায়, কাঁধে, বাহুতে, পিঠে অথবা চোয়ালে ব্যথা হয় নিয়মিত হিজামা থেরাপিতে কমে।
৫. মাথা ব্যথা কমায়
মানুষকে সরাসরি কষ্ট দেয় এমন রোগ মানেই ব্যথা। আর তাদের ভেতর মাথা ব্যথা অন্যতম। এর কারণে রোগী এতটা দূর্বল হয়ে পড়ে যে সুস্থ ভাবে চিন্তা করতে অক্ষম হয়ে পারে। এমনকি তা আর্থিক কাজেও সমস্যা করে। ভাল খবর হলো ক্লিনিক্যালি হিজামা মাথা ব্যথার জন্য খুব ভালো ওষুধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
Related article: Holding This Point On Your Body Can Melt Stress and AnxietyA joint research study between the Kermanshah University of Medical Sciences in Iran and the University of Alabama at Birmingham, USA দেখিয়েছেন হিজামা (Wet Cupping) মাথাব্যথার জন্য উপকারী।
তাদের এ স্টাডি থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে রোগীরা ২৮ দিনের ভেতর ৩ বার হিজামা করিয়েছে তাদের ব্যথার তীব্রতায় ৬৬% সুস্থতা এসেছে।
তাদের এই পেপারের মত হিজামার উপর কৃত অনেক পেপার ই স্বীকার করেছে ক্লিনিক্যালি হিজামা মাথাব্যথার জন্য উপকারী।
এছাড়াও হিজামার সাথে অন্যান্য রোগের রিসার্চে হিজামার উপকারিতার কথাই কেবল উঠে এসেছে যা আমাদের

হযরত আবু হুরাইরা রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ হযরত জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।”
আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৭০
কোন মন্তব্য নেই